আমার ভিতর বয়ে চলে কোন এক নদী, কোন স্রোত নেই / অপুষ্টির এই নদীটিতে, শ্যাওলা জমেছে প্রচুর, আত্মার / আবর্জনায় জমেছে নীল, প্রণয়ের নীলে বিদ্ধ হতে হতে / পলাতক যযাতি নীলের খুব গভীরে ডুবেছে অরণ্যে। ... ...
আমার কিছু অসুস্থতা আছে, গোছানো / ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রোদ এভাবে যখন ঐ উঠোনে / প্রতিদিন সকালে ভাবি / এখানের সব অস্তিত্ব গভীর মৃত্যুচিন্তায় ডোবানো ... ...
পুজোর জগতেও এবার এসে গেল পরিবর্তন। ষষ্ঠীর দিন এক বাংলা চ্যানেল জানালেন, এবার ফোকাসে পরিবর্তন। আর কলকাতা-কলকাতা নয়। এবার পুজো গোটা বাংলার। এবার পুজো বৃহৎ চেতনার। বঙ্গ চেতনা ও মানবচেতনার। ছোটোখাটো ইস্যুতে থিমকে আর বেঁধে রাখা যাচ্ছেনা যাবেনা। হাওড়ার পুজো কমিটির প্রধান জানালেন, তাঁদের এবারের পুজোর থিম জঙ্গলমহল, সাঁওতাল সমাজ ও নাগাল্যান্ড। জঙ্গলমহল আর ভূমিপুত্র না হয় বোঝা গেল, কিন্তু নাগাল্যান্ড কেন? না, নাগাল্যান্ড সরকার তাদের ভূমিপুত্রদের নিয়ে যে ধরনের উন্নয়ন ঘটিয়েছে, বাংলার সরকার দশকের পর দশক ধরে তার কানাকড়িও করতে পারেননি। ... ...
পুজোয় কী কী সিনেমা না দেখলে জীবন বৃথা? চেখে দেখে জানাচ্ছেন লেখক। হ্যাঁ পুজোর রিলিজ বলতে আবার পুজোর মধ্যেই রিলিজ হল ভাববেন না। আমাদের উৎসব ঢের আগেই শুরু হয়ে গেছে। ... ...
(মেয়েরা ভালোবাসেনা বলে রোজ সন্ধ্যেবেলা রাগ হয় আর সেই রাগ থেকে এই সব লেখা) আপেল দেখে আদমি চেনা যায়। সুব্রতর বাড়িতে দাদা-বৌদি বেড়াতে গেল, আমরাও রাতে বাড়ি ফাঁকা পেয়ে ভিসিআর ভাড়া করে পানু দেখার ব্যবস্থা করলাম। সে কি সাংঘাতিক পানু। মেয়েদের মতো বুক আছে আবার ছেলেদের মতো ইয়ে। সেই প্রথম ঐ জিনিস দেখলাম। অনেক পরে জেনেছি তাদের কী বলে ইত্যাদি কিন্তু তখন আমাদের মধ্যে দারুণ তর্ক - ওরা আসলে ছেলে না মেয়ে। সুব্রত জ্ঞানী ছিল। বলল ওরা ছেলে। অ্যাডামস অ্যাপল খালি ছেলেদের থাকে। ... ...
সাঁঝের ঝোঁকে তিন মূর্তি হাজির। জলপথে আড্ডা চলছিলো এক শুক্কুর সন্ধ্যায় বন্ধু পম্পা-নীলাঞ্জনের ছাদে, সেখানে প্রায় চাঁদেরই সাম্পান বেয়ে হাজির, সৈকত, বরুণ আর গৌরব। তিনজন তিন আকৃতির। সৈকতকে ভীমের রোল দিলে আর কেউ ঠেক খাবে না। গৌরব বেশ গণেশ মতন, আর বরুণ ফ্রেঞ্চ কাটে কাত্তিকটি। এরা তিনজনাই বেঙ্গলী-ইন-ব্যাঙ্গালোরের ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর। সাঝেঁর ঝোঁকে এহেন অতর্কিত হামলা - কওহে ইহার কারণ কী? ... ...
অমল ধবল পালে খুব একটা হাওয়া এখনো লাগে নি, বরং আগের হপ্তাটা যা গরম গেল, "ভিক্ষে চাইনে মা, কুকুর সামলা' অবস্থায় নিয়ে এসেছে আপামর ইউ এসের পূর্ব উপকূলবাসীদের। সাউথ জার্সি, ফিলাডেলফিয়া ইত্যাদি নাকি সেই '৫৭ সালে এইরকম গরম পেয়েছিলো, আমাদের এদিকটা ঠিক ততটা না হলেও "ছোটে মিয়াঁ শুভানাল্লা', চল্লিশের ঘরের চৌকাঠ ডিঙিয়ে ঘোরাঘুরি করেছে। (দেখেছো? ডিগ্রী সেলসিয়াস বেরিয়ে এলো, ফারেনহাইটে ব্যাটারা কী সব এইট্টি নাইন্টি হাঁকে, শুনেই গরম লাগে, ওসব সাহেবসুবোদের জন্যে, তারচেয়ে দ্যাশের টান, ঐ সেন্টিগ্রেডই ভালো) ... ...
দেশজুড়ে চারদিকে যখন অরাজনৈতিকতার জোয়ার, মানুষ ব্যাপক এবং বিশাল গণআন্দোলনে যোগ দিতে দিতে জানান দিচ্ছেন যে তারা রাজনীতি করছেন না, তখন একটি কাগজ ( একা এবং কয়েকজন গুয়াহাটি) "অসমের বাঙালির রাজনৈতিক ভাবনা" এরকম একটা বিষয় বেছে নেয়াতে মনেই হয় তারা স্রোতের বিরুদ্ধে পা ফেলতে চাইছেন। কিন্তু স্রোতের বিরুদ্ধেও একটা স্রোত রয়েছে--- বলিউড পরিচালকেরাও প্রায়ই উচ্চারণ করে থাকেন "জরা হটকে"। বাঙালির রাজনৈতিক ভাবনা নিয়েও কিন্তু এই "জরা হটকের" বড় জটিল জাল ছড়ানো রয়েছে। একে "রাজনীতি", তায় "এই জাল"-কথা বলতে বেশ ভয় করেই বটে। ... ...
আমি তখন যুদ্ধক্ষেত্রে উঠে দাঁড়িয়েছিলাম। পায়ের একদিক থেকে রক্ত ঝরে যাচ্ছে তখনো, তবে বেশ কমে এসেছে। বাঁধন দিয়েই আটকেছিলাম। চারপাশে শুধু মানুষের স্তুপ। তার মধ্যেই আমার মত কয়েকজন ছটফট করছে। কারোর হাত, কারোর পা, কারোর মাথা চোট পেয়েছে। আর বাকি যারা পড়ে আছে, উঠছেনা, তারা সব মৃত মানুষ। মাঠটার চারপাশে কিছু গাছ ছিল। গাছগুলোতে এখন পাখির দল কিচমিচ করছে। মানে সন্ধ্যা হয়ে এল। এছাড়া সন্ধ্যা বোঝার উপায় এখনো নেই। আকাশটা লালচে হয়ে আছে। কনে দেখা আলো না কী বলে যেন! বেশ কিছু লোক হাতে গড়া মাচা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ... ...
দুটো নাও ধীরে ধীরে ঢুকছে নদী থেকে সোতা খাল দিয়ে। একটার খোল জুড়ে আমড়া। আরেকটার বুকজুড়ে নারিকেল। ঘাটকুলের কাছ দিয়ে যেতে যেতে জলে ঢেউ ওঠে না। মেয়েটি হাঁটু জলে দাঁড়িয়ে ভাটা মাছ তোলে। কাকিলা মাছ ঘোরে ফেরে। বড়শি ফেলে মেয়েটি গাইতে থাকে- দিয়া মোরে ফাঁকি রে আমার সোনার ময়না পাখি। বাতাস প্রবল হলে সুরটা বহুদূরে উড়ে যায়। সেহাঙ্গলের ঠোঁটায় এসে সুড় সুড় করে। কড়াইগাছে একটি তক্ষক অবাক হয়ে চেয়ে থাকে। আর বাতাস মন্দ স্পষ্ট শোনা যায়- সোনার ময়না পাখিটি উড়ে যায়। ডানার শব্দ। আর কান্নার পুরণো কম্পন। বুঝতে হলে কান থাকা দরকার। ... ...
উজ্জ্বলকুমার দে চোর। সে যদি আজকে নবীনা সিনেমার ফুটে থাকতো, তাহলে মাজারের পাশের গলি দিয়ে দৌড়ে দশ গলির এক গলির মধ্যে লুকিয়ে পড়তে পারতো। নিদেনপক্ষে যদি যোগেশচন্দ্র চৌধুরী ল কলেজের সামনে থেকে বক্তিয়ারশা রোডে ঢুকে পড়তো, তাহলেও ধরা না পড়ার একটা আশা ছিলো। কিন্তু বোঝাই যাচ্ছে, যে সে এর কোনওটাই করে উঠতে পারে নি। আর সময়টাও এমন, যে অসময়ে টিউশানি পড়তে আসা ছেলেপিলের বড্ড উপদ্রব। ... ...
খাজুরাহো মন্দিরের দেয়াল থেকে মাটিতে লাফাবার সময়, ঘুরঘুরে পোকার মুখে পাঠানো আদেশ তামিল করার জন্যে, বাতাসের মাঝপথে, নিজেকে পাষাণ মূর্তি থেকে রক্তমাংসের মানুষে পালটে নিয়েছিল কুশাশ্ব দেবনাথ নামে স্বাস্থ্যবান যুবকটি, যে কিনা হাজার বছরেরও বেশি চাণ্ডেলাবাড়ির একজন গতরি, ভারি-পাছা, ঢাউসবুক উলঙ্গ দাসীর ঠোঁটে ঠোঁট, যোনিতে লিঙ্গ, আর স্তনে মুঠো দিয়ে ঠায় দাঁড়িয়েছিল । ... ...
প্রতিদিন খুব ভোরে, কাক ডাকারও আগে নীলিমার ঘুম ভাঙে। দিনের এই সময়টা আকাশ ঘন অন্ধকারে ঢাকা থাকে, ঘড়ি দেখে বুঝতে হয় ভোর হয়েছে। শীত আসছে, এখন রাত শেষ হতে দেরি হয় খুব। আজকাল ঘুম থেকে উঠে একটা হালকা চাদর গায়ে না দিয়ে বেরোনো যায়না, মফস্বলের এই দোতলা বাড়িটা, তার বাসিন্দাদের মতই সর্বাঙ্গে কুয়াশার চাদর জড়িয়ে ঘুমিয়ে থাকে। ... ...
আজকে ডকইয়ার্ড ভোঁভা - ছুটি। না, ঠিক ছুটি নয়, আজ স্ট্রাইক, অর্থাৎ ছুটিই। প্রায় সাড়ে-ছ বছর কাজ করছি, এই প্রথম এমন স্ট্রাইক হলো। কারণ? ... মারপিট। দুই দলের মধ্যে তুমুল মারপিট হলো গতকাল দুপুরে, আমি দেখলাম। অনেকেই দেখলো, দূর থেকে। মারপিট কেন হয়েছে, সেটা ঠিক জানিনা। বক্সীর দলের কোন ছেলে নাকি তোলাবাজীর তিন হাজার সাতশো টাকা নিয়ে চম্পট দিয়েছে (পরে জানা গেছে), সেটা প্রথমে বক্সী ধরতে পারেনি। ভেবেছে বাবলুর দলের সাথে ছেলেটার আঁতাত আছে। ... ...
ওটা আমার রোগ। টাইফয়েডের মতো ভুগি আমি... অফিসে, আড্ডায়, প্রেমে! প্রোজেক্ট ম্যানেজারকে ঠারেঠোরে শুনিয়ে দিই... এই যে তোমার কেলানো দাঁতের ছুরির ফলা এর ধার আমি জানি! পেছন ফিরলেই ড্রাকুলা হয়ে কামড়াবে আমার পিঠ। এই যে এতো নলেনগুড়ের গন্ধ, কথায় কথায় সব আমি জানি। আমার ঘাড়ে বন্দুকের নল ক্ষমতার উৎস আর তোমাদের শোবার ঘরে ট্রিংকাস-এর উল্লাস! ... ...
অ্যামেরিকার দক্ষিণ প্রান্তে একটি ক্যাম্পাস টাউন। প্রায় গ্রাম। দুর্গাপুজোর একমাস আগের এক সন্ধ্যা। একটি অ্যাপার্টমেন্টের লিভিং রুমে বেশ কয়েকটি ছেলে-মেয়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসে-দাঁড়িয়ে আছে। সবাই মিলে কথা বলার ফলে কারুর কথাই বোঝা যাচ্ছে না। ... ...
সারা গায়ে ট্যাটু আঁকা, তুমি তো রেবেল, রাগী যুবতী / সারা গায়ে রিং গাঁথা, তুমি তো সুরের দেবী হতে চেয়ে / খরখরে অ্যাসিড হলে, পাথরে পাথর ঘষলে, আগুন চমকালে ... ...
যখন আমি পথের ধারে / ডানা কাটা এক বৃক্ষ ছিলাম / তখন রোদ আমার আয়ুর / শ্যাওলা পড়া ইটগুলো বেছে দিতো / আমার ডালে আত্মহত্যা করতে আসা / রঙিন ঘুড়ি উড়িয়ে দিতো / তার নাম প্রেম / তার নাম প্রেম ... ...
জল এক্কে জল, দুগুণ জলে নদী / তিন জলকে ভরদুপুরে ডুব দিতে যাস যদি / চার জলে তোর চোখের কোলে হঠাৎ ছলাৎ ঢেউ / পাঁচ আঁজলায় উথাল-পাথাল ডাক দিয়ে যায় কেউ / জল ছয় জল, জল সই চল, চাতক-তলার হাটে ... ...
অপমান রেখা ঢেকেছো কভারস্টিকে / স্বপ্ন খেয়েছে গাঢ় আইলাইনার / কবিতা কোথায় হারিয়েছে তা জানো না / কোথায় হারালে অতল-ডুবুরী-চোখ!!! ... ...